ব্যাংকিং খাতে নীতিবান নেতৃত্বের অভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে বলে তথ্য উঠে এসেছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে। গবেষণা জরিপে অংশ নেয়া অধিকাংশ ব্যাংকারের এই মত বলে তাতে বলা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অব ব্যাংকস’শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।
প্রতিবেদনে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক কর্মী কমে যাওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, এটি কোনো ভালো মানবসম্পদ বিভাগের নির্দেশক নয়।
এ ছাড়া ব্যাংকের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলোর অতি সামান্য বরাদ্দে হতাশা প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনে।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ব্যাংকে মোট কর্মী কমেছে প্রায় ১০ হাজার। ২০১৬ সালে ব্যাংক কর্মী ছিল ৯০ হাজার ২৬৫ জন। ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ২৪৫ জন। এটা কেন কমছে সেটা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন কর্মশালার বক্তারা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি দক্ষতার সঙ্গে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি দল। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক মাসুদুল হক, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক রেক্সোনা ইয়াসমিন, বিআইবিএমের প্রভাষক আনিলা আলী, বিআইবিএমের প্রভাষক লামিয়া রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম এবং আল- আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মো. মাজহারুল ইসলাম।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬১ শতাংশ ব্যাংকার মনে করেন দেশের ব্যাংকিং খাতে নীতিবান নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকিং খাতের নীতিবান নেতৃত্ব দরকার বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকের অপারেটিং খরচ ১০০ টাকার মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নে মাত্র ২৫ পয়সা অর্থ ব্যয় করে। প্রশিক্ষণে বাজেটও কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। আর যারা ব্যাংক থেকে চাকরি ছেড়ে দেয় তাদের ২৫ শতাংশ কর্মী তাদের বসের (ম্যানেজার) সঙ্গে মনোমালিন্যর কারণে চাকরি ছাড়েন।
কর্মশালার উদ্বোধন করে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ব্যাংকিং খাতের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু সার্কুলার জারি করেছে। এসব সার্কুলার যথাযথ পরিপালনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নজরদারি করা হয়। তিনি বলেন, ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। এতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নে ব্যয় ৫০ শতাংশ কমিয়েছে। ১০০ টাকা অপারেটিং ব্যয়ের মধ্যে মাত্র ২৫ পয়সা কর্মীদের উন্নয়নে ব্যয় করেছে ব্যাংক। এটা খুবই হতাশাজনক। আন্তর্জাতিকভবে অপারেটিং খরচের ২ থেকে ৩ শতাংশ ব্যয় করা হয় মানবসম্পদ উন্নয়নে। একই সঙ্গে এক-তৃতীয়াংশ ব্যাংক তাদের মানবসম্পদ উন্নয়নের ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের নৈতিকতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা। তিনি বলেন, নৈতিকতা বজায় রাখতে পারলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। তিনি ব্যাংকের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন।
বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী ব্যাংকিং খাতে চাকরির জন্য লাইসেন্স ব্যবস্থার প্রবর্তনের অভিমত দেন। তার মতে, এটা করা হলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। বিশেষ করে পেশাদারি সংক্রান্ত লাইসেন্স থাকলেও ব্যাংকিংয়ে নেই। ব্যাংকিং খাতে এখন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। সুতরাং এ বিষয়টি বিবেচনায় এই লাইসেন্স কাজে লাগবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, নারী কর্মীদের সন্ধ্যা ছয়টার পর ব্যাংকের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো হচ্ছে। অথচ এখনও ব্যাংকে ১৬ হাজার পোস্ট খালি আছে।
তিনি বলেন, আবার ব্যাংকের পরিচালকদের একটি অংশ জানে না কর্মীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে। এ জন্য ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, কিছু কিছু ব্যাংকে দেখা যায় ১৮ বছর পুরোনে কর্মী রয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। এটা চিন্তার বিষয়। তিনি বলেন, ব্যাংকের কর্মী কেন কমছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ আব্দুল্লাহ বলেন, মানবসম্পদ কর্মীদের বেসিক ব্যাংকিংয়ের ধারণা থাকতে হবে। পদোন্নতির বিষয়েও সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় সমস্যা তৈরি হয়। এসব বিষয়ে ব্যাংকগুলোর নজর দিতে হবে।
ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কোম্পানি সেক্রেটারি জন সরকার বলেন, ব্যাংকের পরিবেশ পরিবারের মতো করে গড়ে উঠতে হবে। ভালোবাসার কারণে পরিবার যেমন টিকে থাকে, ঠিক তেমনি ব্যাংকের মধ্যেও একই পরিবেশ রাখতে হবে। তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ফি নেওয়া ঠিক নয়। কারণ এটিকে বিজ্ঞাপন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
প্রকাশক : ফয়সাল আহমেদ খান, সম্পাদক : জীবন খান, উপদেষ্টা : ডি আই জি আনোয়ার (অব:) , মোহাম্মদ আমিমুল এহসান খান, আইন উপদেষ্টা : ফেরদৌস কবির খান, নির্বাহী সম্পাদক : মতিউর রহমান ( জনি), সিনিয়র সহ-সম্পাদক: সজীব হোসেন (জয়), বার্তা সম্পাদক: মো: মোরশেদ আলম, মফস্বল সম্পাদক: এহতেশামুল হক (মাশুক), সহ-বার্তা সম্পাদক: মো: জিল্লুর রহমান খান, সহকারী সম্পাদক : ইমরান হোসেন।
চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, টিকাটুলী, ঢাকা-১২০৩। মোবাইল : ০১৭১৪-০২২৮৭৭, E-mail : jibonnews24@gmail.com
জীবন নিউজ ২৪ ডট কম