1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ:
সরকারের দেয়া সময়ের মধ্যে বিচার ও সংস্কার সম্পন্ন হলে নির্বাচন হতে পারে :এনসিপি বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ স্থানগুলোর র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা চট্টগ্রামের চকবাজারের খালে পড়ে নিখোঁজ ছয় মাসের শিশুর মরদেহ ১৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি চারতলা ভবনের ধস, নিহত-৪ সপ্তাহের ব্যবধানে হিলিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার আহ্বান :শফিকুল আলম ভারতে বিতর্কিত সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জংলির গ্রস কালেকশন দুই কোটি ছয় লাখ টাকা ঢাকার সাথে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না দিল্লি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে প্রত্যাহার

মাছ খাচ্ছেন না প্লাস্টিক?

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : বুধবার, ২৭ জুন, ২০১৮

তেলতেলে চেহারা দেখে চোখ আটকে গিয়েছিল। কী আর করা! টাকার মায়া না করে কিনে ফেললেন চোখ-ধাঁধানো এক মাছ। বাসায় এনে মহা আয়োজনে হলো রান্না। তারপর গরম-গরম পাতে পরিবেশন। সুস্বাদু মাছের টুকরো মুখে পুরতেই বেরিয়ে এল একটি শব্দ—আহা!

আপনার এই তৃপ্তির ঢেকুরের আড়ালে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে রোগব্যাধি। মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে স্বাস্থ্য। কারণ, আপনি যে মাছ খাচ্ছেন, ওতে ক্ষতিকর প্লাস্টিক থাকতে পারে।

সম্প্রতি সিএনএন অনলাইনে প্রকাশিত একটি ভিডিও নিউজ দেখলাম। রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো অবস্থা। মাছের মাধ্যমে আমরা কীভাবে প্লাস্টিক খাচ্ছি, তা দেখানো হয়েছে ভিডিওটিতে। এ নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকও তথ্যচিত্র করেছে।

মাছে প্লাস্টিক থাকার তথ্য-প্রমাণ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে। সপ্তাহ চারেক আগে থাইল্যান্ডে একটি মৃত পাইলট তিমির পেটে প্লাস্টিকের ৮০টি ব্যাগ পাওয়া যায়। পাকস্থলীতে বিপুল প্লাস্টিকই তার মৃত্যুর কারণ।

মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে মানুষের শরীরে ঢুকছে। চিত্রটি টুইটার থেকে নেওয়াহংকংয়ে অনেক মাছ প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা খাচ্ছে। গবেষকেরা একটি মাছেই ৮০ টুকরো প্লাস্টিক পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এমন মাছ হরদম বাজারে যায়। কোরীয় উপদ্বীপে সামুদ্রিক মাছে প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টার্স জার্নালের গবেষণা (২০১৫) আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বাজারের প্রায় ২৫ শতাংশ মাছে প্লাস্টিক বা ফাইবার থাকার তথ্য এক ভয়ংকর বার্তা বহন করে।

‘মাছে-ভাতে বাঙালি’—প্রবাদটি আর খাটে কি না, তা নিয়ে তর্ক হতেই পারে। দুর্দিন সত্ত্বেও বাঙালির পাতে মাছ না উঠলে চলে! প্রাণিজ আমিষের জন্য মাছ এখনো আমাদের অন্যতম ভরসা। মাছের সুদিন ফেরানোর নানা উদ্যোগের মধ্যে এবার শুনুন এক দুঃসংবাদ। বাংলাদেশেও মাছে প্লাস্টিকের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এসডো) সম্প্রতি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে গবেষণা করে। তারা তিন শহরের নদী-খাল-জলাশয়ের পানিতে প্লাস্টিক (মাইক্রোবিড) পেয়েছে। এসডো প্রায় ১০০ মাছের ওপর গবেষণা করে। সংস্থাটি মাছের পাকস্থলী, মুখ ও ডিমে মাইক্রোবিড পাওয়ার কথা জানায়। রুই ও পুঁটি মাছে প্লাস্টিকের উপস্থিতি বেশি।

প্লাস্টিক আমাদের জীবন সহজ করে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই প্লাস্টিকই আমাদের গিলে খাচ্ছে। প্লাস্টিকে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্য বড় ধরনের হুমকির মুখে।

বিশ্বে প্রতিবছর ৩৩০ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়। ছবি: রয়টার্সসিএনএন জানাচ্ছে, বিশ্বে প্রতিবছর ৩৩০ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়। ইউএন এনভায়রনমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বছরে ৮ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক সমুদ্রে পড়ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি হবে বলে চলতি বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এসব তথ্য বলে দেয়, আমরা সত্যিই এক প্লাস্টিকের গ্রহ হতে যাচ্ছি।

প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহারে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানাচ্ছেন, দেশে ২০১৪ সালেই দিনে ২৭ হাজার টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছিল। এই হার চললে ২০২৫ সালে তা ৫০ হাজার টনে পৌঁছাবে।

দেশে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত ‘বিট প্লাস্টিক পলিউশন’ শিরোনামের সেমিনারে প্লাস্টিক বর্জ্যের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। দেশে দিনে ১ হাজার ৭০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ঢাকায় তা ৩৮১ দশমিক ৩৬ টন। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই গুরুতর।

প্লাস্টিকের দূষণে বাংলাদেশ যে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে, তা জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্থ ডে নেটওয়ার্কের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় প্লাস্টিক দূষণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দশম। প্লাস্টিকের লাগাম না টানলে আমাদের কপালে যে মহাদুর্ভোগ আছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বছরে ৮ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক সমুদ্রে পড়ছে। ছবি: রয়টার্স

আমরা এখন নিশ্চিন্তে প্লাস্টিকসামগ্রী ব্যবহার করছি। এথায়-সেথায় ফেলছি। কিন্তু আমরা ভাবতেও পারছি না, ঘুরে-ফিরে এই প্লাস্টিকই আমাদের পেটে যাচ্ছে।

প্লাস্টিক অপচ্য। এর আয়ুষ্কাল কমপক্ষে ৫০০ বছর। একপর্যায়ে প্লাস্টিক ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র কণা মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে পরিচিত। মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে শেষ গন্তব্য হিসেবে মানুষের শরীরে ঢুকছে। বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

প্লাস্টিকের বিস্তার ও ব্যবহার আমাদের সাদামাটা ভাবনার চেয়ে বহুগুণ বেশি। পাত্র, আসবাব, পলিথিন—এসব সচরাচর সামগ্রীর বাইরে আরও অনেকে ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার লক্ষণীয়। সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্টসহ বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকসে মাইক্রোবিড নামের ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে।

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা পুকুর-ডোবা, নদী-নালা, খাল-বিলসহ জলাশয়ে পড়ছে। এই প্লাস্টিক মাছ খাচ্ছে। আমরা আমাদের অজান্তে মাছের মাধ্যমে প্লাস্টিক খাচ্ছি।

প্লাস্টিকের দূষণ একক কোনো ক্ষেত্রে আটকে নেই। মাটি, পানি, বায়ু—সর্বত্রই প্লাস্টিকের দূষণ চলছে। প্লাস্টিকের বিস্তার কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে, তার প্রমাণ মেলে হ্যারিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায়। আমরা যা-ই খাচ্ছি, তার সঙ্গে প্লাস্টিক থাকছে বলে গবেষকদের দাবি। এবার নিজেরাই চিন্তা করুন, আমাদের পেটে দিনে কতটা প্লাস্টিক যায়।

বাংলাদেশে দিনে ১ হাজার ৭০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি
প্লাস্টিকের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন কিং’স কলেজ লন্ডনের এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক ফ্রাঙ্ক কেলি ও ডাবলিনের গ্যালওয়ে-মায়ো ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অ্যানি মেরি মাহন।

খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক ধীরে ধীরে মানবস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে—এমন মত কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব ওশান সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির।

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান বলছেন, থাইরয়েডের সমস্যা, ক্যানসার, চর্মরোগ, কিডনি রোগের জন্য পরোক্ষভাবে প্লাস্টিক দায়ী।

প্লাস্টিক তৈরিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়টি প্রমাণিত। এই রাসায়নিক ক্যানসারের কারণ হতে পারে। মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, ফুসফুস ও প্রজনন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে প্লাস্টিকের রাসায়নিক। কোষ ধ্বংস করতে পারে প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের সঙ্গে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মানুষের পেটে চলে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

মানবস্বাস্থ্যের ওপর প্লাস্টিকের প্রভাবের সীমা-পরিসীমা নিয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। তাই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আরও বড় পরিসরের গবেষণার প্রয়োজন। তবে সবার আগে দরকার প্লাস্টিকের ‘পাগলা ঘোড়া’ থামানো।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম
Theme Customized BY LatestNews