বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নাম করে দুই দেশে এক ধরনের অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে প্রতারক চক্র। উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে চলছে মানব পাচারের ব্যবসা। লাখ লাখ টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। লাখ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর তাদের মানহীন ভুয়া কলেজে ভর্তি করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার দ্য স্টার পত্রিকার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় পৌঁছার পর ভিকটিমরা বুঝতে পারেন, যে কলেজে তাদের ভর্তি করা হয়েছে, সেখানে পড়ালেখার কোনো বালাই নেই। বিপুল অর্থ খরচ করে যাওয়ার পর তাদের দেশে ফিরে আসারও উপায় থাকে না। ‘ছাত্রত্ব’ টিকিয়ে রাখতে প্রায়ই তাদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায় করে কলেজগুলো। আর স্টুডেন্ট ভিসা হওয়ায় বৈধভাবে রোজগারেরও কোনো সুযোগ থাকে না। ফিরতি প্লেনের টিকিটের টাকা জোগাড় করতেই হোক আর ঋণ শোধের জন্যই হোক, এদের অনেকেই বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতারণা করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে বাংলাদেশের কিছু স্টুডেন্ট কনসালট্যান্সি ফার্ম। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে এ ফাঁদে ফেলা হচ্ছে।
স্টুডেন্ট ভিসায় শিক্ষার্থী পাঠানোর এ প্রতারণার সঙ্গে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ উভয় দেশের একটি চক্র সক্রিয় বলে খবর মিলছে। উভয় দেশের সরকার যৌথ উদ্যোগ নিতে পারে। মালয়েশিয়া এরইমধ্যে কয়েকটি কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষার্থী ভর্তির কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নামসর্বস্ব কলেজে পাঠানোর প্রক্রিয়া বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। একসময়ে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়। নামসর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। ইংল্যান্ড সরকার কঠোর হস্তে সেগুলো দমন করে। নামসর্বস্ব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেয়াসহ তদারকিও বাড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে ইংল্যান্ডে সুবিধা করতে না পেরে বাংলাদেশের প্রতারক চক্র এখন মালয়েশিয়াকে বেছে নিয়েছে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রতারণার নতুন স্থান হিসেবে। এমন প্রবণতা বন্ধে কর্তৃপক্ষের শক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ভুঁইফোড় কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো স্টুডেন্ট কনসালট্যান্সি ফার্মগুলোর দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে স্টুডেন্ট ভিসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি নীতিমালায় আনা প্রয়োজন। বিশেষ করে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণা করে, সেক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধ থাকা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতিমালার আওতায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে ‘ফরেন স্টাডি লাইসেন্স’ ইস্যু করা যেতে পারে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সেখান থেকে এনওসি (ছাড়পত্র) গ্রহণ বাধ্যতামূলক হবে। এ ছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের বিপরীতে মোটা অংকের জামানত থাকবে, যা থেকে যেন প্রতারিত শিক্ষার্থী অর্থ ফেরত পেতে পারেন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়া কোনো বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশ করা যাবে না। টিউশন ফি সংশ্লিষ্ট বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের বিপরীতে শুধু ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাদানের ব্যবস্থা করা, সার্ভিস চার্জ ছাড়া কোনোক্রমেই নগদ টাকায় লেনদেন না করা, এসব প্রতিষ্ঠান খোলার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে স্থানীয় থানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ব্যবস্থা করা এবং প্রতি ছয় মাস পর প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করা উচিত। এতে শিক্ষা ভিসা নিয়ে প্রতারণা ও মানুষ পাচারের প্রবণতা হ্রাস পাবে বৈকি।