নিউজ ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমা ডিসেম্বর থেকে ছাব্বিশের জুন পর্যন্ত বেঁধে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। এছাড়া, ভোট নিয়ে জামায়াতসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের প্রায় একই সুর দেখা যাচ্ছে।
তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক্ষেত্রে স্রোতের বিপরীতে। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সরকারের দেয়া সময়ের মধ্যে বিচার ও সংস্কার সম্পন্ন হলে নির্বাচন হতে পারে। অন্যথায় ভোটের পক্ষে নয় এনসিপি।
দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়া হলে এই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য না হয়ে শুধু নির্বাচনের কথা বললে বিএনপি জনগণের সাড়া পাবে না।
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার না করলে ভোটে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনও সম্ভব হবে না।
এদিকে, ভোটের সময়সীমা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিএনপি যে দাবি জানিয়েছে তা নিয়েও এনসিপি নেতারা নিজেদের মত জানিয়েছেন।
আখতার হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দল যেকোনো বিষয় দাবি করতে পারে। তবে সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য বা জনগণের মাঝে কতটা সাড়া ফেলতে পারলো, এটি একটি বড় বিষয়। যদি পূর্বের অবস্থায়ই দেশ থাকে তাহলে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিজম ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সারোয়ার তুষার বলেছেন, ডিসেম্বরে ভোট না হলে দেশে যদি কোনও বিশৃঙ্খলা হয়, তাহলে তার দায় বিএনপিকেই নিতে হবে। দলটি নির্বাচনের রোডম্যাপ নয় ডেডলাইন চাচ্ছে। অর্থাৎ নির্বাচনের তারিখ চাচ্ছে। দলটি জাতীয় এজান্ডা থেকে দলীয় এজেন্ডাকে বড় করে দেখছে।
অপরদিকে, নির্বাচনের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে পাচঁ বছর ক্ষমতায় রাখা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনও কোনও পক্ষ সরব। এনসিপি নেতা সারজিস আলম কোন রাখঢাক না করে ফেসবুকে এ বিষয়ে পোস্টও দিয়েছেন। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বিষয়টি ন নিয়ে কথা বলেছেন। দলগতভাবে এনসিপিও কী পেছনে থেকে এই ক্যাম্পেইনে রসদ যোগাচ্ছে?
এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, এই ক্যাম্পেইনের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে এনসিপির কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তবে কাজের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সময় এই সরকারের পাওয়া উচিৎ।
সারোয়ার তুষার বলেছেন, এই সরকারের পাঁচবছর ক্ষমতায় থাকার দরকার আছে বলে মনে করি না। সংস্কারের পর ভোট যখনই হোক তার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের বাড়তি আনূকূল্য পাচ্ছে এনসিপি। উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন তাদের প্রভাবশালী দুই সহযোদ্ধা। তবে এতে বাড়তি কোনও আনুকূল্য পাচ্ছেন না দাবি করছেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি বিএনপির বিরুদ্ধে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও তোলেন তারা।
আখতার হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো কোনও নিপীড়নের শিকার হয়নি। সবাই তাদের হিস্যা বুঝে নিচ্ছে। সে জায়গায় এনসিপি সরকারের আলাদা আনূকূল্য পাচ্ছে এমন কথা সঠিক নয়।
সারোয়ার তুষার বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। প্রশাসনের ৯০ শতাংশ বিএনপি ও বাকী ১০ শতাংশ জামায়াতের পক্ষে চলে গেছে। প্রশাসনের সাথে বিএনপির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। দলটির পছন্দের লোকই প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে। বিএনপির কথায় সংবিধান বাতিল, রাষ্ট্রপতি অপসারণ ও জুলাই প্রক্লেমেশন হয়নি। তাই এনসিপি আনূক্যুল্য পাচ্ছে এটি ভুল। বরং বিএনপিই আনূকূল্য পাচ্ছে।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো এনসিপিও নির্বাচন চায়। কিন্তু সংস্কারের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন না হলে গণতন্ত্র আবারও সংকটে পরবে।
সূত্র যমুনা টিভি