কোরবানি ঈদের এক মাসের কম বাকি। এর মধ্যে গবাদিপশু বিক্রির জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন রাজধানীসহ আশপাশের গরু খামারিরা। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা হয় না বলে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝেও বেশ সাড়া ফেলেছে এসব ডেইরি ফার্মের গরু।
উদ্যোক্তারা বলছেন, খামারের গরুগুলো শতভাগ প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে মোটাতাজা করা হয়।
তাই সুঠাম, সবল ও রোগমুক্ত হয়। এজন্য ক্রেতাদেরও বেশ সাড়া পাওয়া যায়। রাজধানীসহ আশপাশের সব গরুর খামার এখন থেকেই সরগরম। অনেকে গরুর হাটের ঝক্কি ঝামেলা আর দালালের দৌরাত্ম্য এড়াতে এবং ভালোমানের গরু পেতে ভিড় করতে শুরু করেছেন এসব ফার্মে।
সরেজমিন রাজধানীর অদূরে মোহাম্মদপুর বোসিলা এলাকায় মেঘডুবি অ্যাগ্রো ডেইরি ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, ছোট থেকে বড় সব ধরনের গরু বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা আছে। বৃত্তাকারভাবে ছোট ও বড় সাইজের গরু ভিন্ন স্থানে রাখা আছে।
একটি গরু থেকে আর একটির দুরত্ব বজায় রাখতে লোহার বেস্টনি দেয়া হয়েছে। খামারের মেঝে পাকা করা আর আরামের কথা চিন্তা করে গরুর পায়ের নিচে রাবারের ম্যাট রাখা হয়েছে। আছে মাথার ওপরে ফ্যান।
অতিরিক্ত গরমে যাতে গরুর কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, এজন্য ব্যবস্থা করা রয়েছে পানির ফোয়ারা। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও বেশ ভালো। গরুর জন্য রাখা হয়েছে সব প্রাকৃতিক খাবার। সব কিছুই যেন স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গোছানো। এছাড়া খামারে গরু দেখানোর জন্য একটি গ্যালারি ও স্টেজ আছে। যেখানে পরিবারের সবাই মিলে নিরাপদ দুরত্বে থেকে গরু দেখেশুনে কিনতে পারবে।
এ খামারে রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে কোরবানির জন্য গরু পছন্দ করতে আসা ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এখানকার গরুর মান অনেক ভালো। আর বিভিন্ন আকারের গরু পাওয়া যায়। যে কারণে ঈদের এক মাস আগেই গরু দেখতে এসেছি। কারণ পরে ভালো গরু নাও পেতে পারি। তাই পছন্দ হলে বায়না করে রেখে যাব। ঈদের আগ মুহূর্তে নিয়ে যাব।
খামারের কেয়ারটেকার মো. সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, তাদের ‘মেঘডুবি অ্যাগ্রো ডেইরি ফার্ম’র মোট চারটি শাখা আছে। এর মধ্যে বোসিলাতে ২টি ও রাজধানীর বাড্ডা সাতারকুল একটি ও কুষ্টিয়াতে একটি। এসব খামারে মোট ১ হাজার ৭০০ গরু আছে।
যেখান থেকে এবারের কোরবানির ঈদের জন্য ১ হাজার গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যেগুলো আকারভেদে দাম পড়বে ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ক্রেতাদের মাঝে কোরবানির হাটে গরু নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। ক্রেতারা বলছেন অনেক সময় কোরবানির পশুর মাংস খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কোরবানি দেয়ার পর দেখা যাচ্ছে পশুর রক্ত কালচে।
মূলত এগুলো অপরিকল্পিতভাবে পশু মোটাতাজা করার কারণে হয়ে থাকে। ব্যবহার করা হয় অতিরিক্ত ক্ষতিকারক ওষুধ। তাই এসব অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকতে আমরা ওষুধ ব্যবহার করছি না। প্রাকৃতিক উপায়ে ভালো খাবার পরিবেশন এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এখানে গরু মোটাতাজা করছি। তাই দিন দিন ক্রেতাদের কাছে এ খামারের গরুর চাহিদা বাড়ছে।
জানা গেছে, এ খামারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া দেশের বাইর থেকেও গরু এনে পরিচর্যা করে বিক্রি করা হয়। খামারটিতে জার্সি, হোলস্টাইন, উলবারি, কাংরেজ, হালিকার, গির, দেশালসহ নিজস্ব উপায়ে ব্রিড করা বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে।
এছাড়া এসব গরুর খাদ্য তালিকায় রাখা হচ্ছে- খড়, চিটাগুড়, গম, চালের খুদ, ভুসি, ডাবলি, ছোলা, কুড়া, খৈল, ধান ভাঙা, খড়, কাঁচা ঘাস ছাড়াও শাকপাতা জাতীয় খাবার।
মেঘডুবি অ্যাগ্রোর মালিক ও পরিচালক মোহাম্মদ আলী শাহিন জানান, আর দশটি খামারের সঙ্গে আমার খামারের তুলনা করা যাবে না। আমি এটিকে ‘প্রাকৃতিক খামার’ বলি। কারণ প্রাকৃতিকভাবেই এখানে গরুর পরিচর্যা করা হয়। তাই এই খামারের গরু উৎকৃষ্ট মানের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্রেতারা চাইলেই আমাদের খামারের গরুকে কি খাওয়াচ্ছি তা সরেজমিন এসে দেখতে পারছে।
খামারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ খামার থেকে গরু কিনে বাসায় নিয়ে যাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। এতে ঢাকার ভেতরে ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ করলেই খামারের পক্ষ থেকে পিকাপভ্যানে গরু বাসায় পৌঁছে দেবে।
আর ঢাকার বাইরে গরু নিতে ক্রেতাদের নিজ উদ্যোগে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। তবে খামারের পক্ষ থেকে একজন রাখাল ক্রেতার বাড়ি পর্যন্ত গরু পৌঁছে দেবে।