অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সাংবাদিকদের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের দ্রুত খাপ খাওয়ানো এবং অনেক বেশি কনটেন্ট তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি একজন সাংবাদিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে (প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, ওয়েব, সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল) সব ধরনের মিডিয়া কনটেন্ট (টেক্সট, স্থির আলোকচিত্র, অডিও-অডিও) তৈরি ও উপস্থাপন করতে পারছেন। শুধু তা-ই নয়, সাংবাদিককে নিউ মিডিয়া ব্যবহার করে পাঠকের সঙ্গে আদান-প্রদানমূলক যোগাযোগ বজায় রাখার কৌশল জানতে হচ্ছে। এতে ভার্চ্যুয়াল জগতে তাঁর এবং ওই সংবাদমাধ্যমের পরিচিতি বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকদের অনেক বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদসূত্র।
বিশ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে আরও এক শ কোটি নতুন গ্রাহক তৈরি হবে। তাদের বড় অংশই ব্যবহার করবে স্মার্টফোন। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ব্লগে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট দেখি, যেগুলো পেশাদার সাংবাদিকদের নয়, সাধারণ নাগরিকদের তৈরি করা। তাঁরা কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্থান থেকে সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার করেন। কাজটি তাঁদের করতে হয় স্মার্টফোন দিয়ে। পেশাদার সাংবাদিকদের মূলধারার গণমাধ্যমের জন্য শুধু স্মার্টফোনের সাহায্যে কনটেন্ট তৈরি তা প্রচারকাজের খুঁটিনাটি বিষয়ে জানা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। একুশ শতকের সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পকেটের স্মার্টফোন দিয়েও (বিশেষ করে ব্রেকিং নিউজ) মিডিয়া কনটেন্ট তৈরিতে পারদর্শী হতে হবে।
কাগজ-কলম থেকে কম্পিউটার তথা সফটওয়্যারে সাংবাদিকতার উত্তরণ তো বেশ আগেই ঘটেছে, এখন এর আরও বিকাশ চলছে। এর ধারাবাহিকতায় এসেছে স্মার্টফোনের ব্যবহার। এখন একজন সাংবাদিক শুধু তাঁর মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করেই ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তাঁর কর্মস্থলে সংবাদ প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি পাঠাতে পারেন। মোবাইল ফোনেই সংবাদ সম্পাদনা করা যায়, তা অনলাইনে পাঠানো যায়। এ ধরনের সাংবাদিকতাকে বলা হচ্ছে মোবাইল জার্নালিজম, সংক্ষেপে মোজো।
এদিক থেকে মোবাইল ফোন এখন শুধু ফোন নয়, সাংবাদিকদের পেশাগত কাজের কার্যকর হাতিয়ারও। স্মার্টফোন ব্যবহার করে যাঁরা সাংবাদিকতা করেন, তাঁরা অনেক সময় ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় কিছু বিষয় এড়িয়ে যান। কিছু সাধারণ নিয়ম শুধু সাংবাদিকদের জন্যই নয়, সবার জন্যই অনুসরণীয়। একটু ভালো মানের ভিডিও ধারণ করতে পারলে ভিডিও সম্পাদনার কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। ভিডিও ধারণ, সম্পাদনা ও নিউজরুমে ভিডিও পাঠাতে কতটুকু সময় নিচ্ছেন, এই দিকগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে স্মার্টফোনের সাহায্যে পুরো একটি প্যাকেজ সংবাদ তৈরি করা যায়। স্মার্টফোন দিয়েই এখন যোগ দেওয়া যায় সরাসরি সম্প্রচারে। নিজের তৈরি মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে পুরো বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে তা পৌঁছানো যায়।
সাংবাদিকতার কাজে, বিশেষ করে সম্প্রচার গণমাধ্যমের জন্য পেশাদার মিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করতে হলে ‘স্মার্টফোন ফিল্মিং’-এর বাস্তব শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সিএনএন, বিবিসি কিংবা আল-জাজিরার মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো মোবাইল সাংবাদিকতা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। বিবিসির কলেজ অব জার্নালিজম ইতিমধ্যে তাদের আট শ সাংবাদিককে মোবাইল সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে কর্মরত এসব সাংবাদিক বিবিসির জন্য নির্মিত ‘পিএনজি’ নামের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদন, ভিডিও, স্থিরচিত্র কিংবা ধ্বনি বিবিসির লন্ডনস্থ বার্তাকক্ষে পাঠাচ্ছেন।
আমাদের দেশে মোবাইল সাংবাদিকতা এখনো পুরোপুরি পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ আর প্রশিক্ষণের অভাব থাকায় অনেকের মনে নতুন ধারার এই সাংবাদিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশে মোবাইল সাংবাদিকতা বিকাশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমগুলো সাংবাদিকতা পেশার গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে এ বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করতে পারে।